করোনার মধ্যেও উৎসবে মাতালে ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ড
লণ্ডন, ৬ ডিসেম্বর : প্রায় দুই বছর পর কারী উৎসবের বর্ণিল আলোয় ভাসলো সেন্ট্রাল লন্ডনের বাটারসি অভ্যুলেশন পার্ক। করোনা মহামারির জন্য ছিলো সেই অনিচ্ছা ও অপ্রত্যাশিত বিরতি। গত ২৯ নভেম্বর, সোমবার সন্ধ্যায় পূর্বের জমকালো ঔজ্জ্বল্য নিয়েই বসেছিলো ‘কারী অস্কার’ খ্যাত ‘ব্রিটিশ ক্যারী অ্যাওয়ার্ড’স এর ১৭তম আসর। বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, মিডিয়া, ব্যবসা ও রাজনীতিসহ বিভিন্ন পেশার দুই হাজারের বেশী আমন্ত্রিত অতিথির জমায়েতে সরব হয়ে উৎসবস্থল।
মহামারী করোনায় বিপর্যস্ত একুশ শতকে পৃথিবী যে ভয়াবহতার মুখোমুখি হয়েছে সেটা বলতে গেলে ছিল কল্পনাতীত।ব্রিটেন এর থেকে দূরে ছিল না। মরণব্যাধির থাবায় হারিয়ে মানুষ, কমিউনিটির অসংখ্য প্রিয়জনদের চিরবিদায় সত্যি হৃদয় বিদারক এবং বেদনার। জানা-অজানা, চেনা-অচেনা স্বজনদের স্মরণ করে তাদের পরিবার পরিজনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়।
বেদনার কঠিন দিন কাঠিয়ে একটু আনন্দের স্পর্শে জীবনকে কল্পনার রঙিন ভুবনে নিয়ে যেতেও ছিল কারী অস্কারে দেশীয় এবং ব্রিটিশ সংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রকাশ।চমৎকার এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় বিশাল হলভর্তি দর্শকরা হারিয়ে যান সীমাহীন মুগ্ধতায়।
অতিথিদের মনজুড়ানো কোরিগ্রাফি এবং সিলেটি বাউল গানের প্রাণকাড়া সুরের মূর্ছনায় কিছুক্ষন যেন বিশাল মঞ্চটি হয়ে যায় মাঠি, নদী আর বাউলের সুরের এক চিলতে বাংলাদেশ।
জনপ্রিয় কমেডিয়ান ও অভিনেতা অমিদ জেলালি’র প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ ক্যারী অ্যাওয়ার্ডস‘র কো-প্রোডিউসার জেফ্রি আলী।
ক্যারী অস্কারের বিশাল টিভিস্ক্রিনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভিডিও বার্তা দোকান হয়।ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী জনসন এনাম আলী এমবিই কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ক্যারী ইন্ডাস্টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর প্রচেষ্টা তুলনাহীন।
মহামারী করোনার ভয়াল পরিস্থিতে ক্যারী ইন্ডাস্টির মানুষের অবদান স্মরণ করে বলেন, মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে তারা উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার চায় এ সেক্টর অনেক অনেক বেশি উন্নতি করুক।
ব্রিটিশ ক্যারী অ্যাওয়ার্ডস ফাউণ্ডডার এনাম আলী এমবিই তার উদ্বোধনী বক্তব্যে মহামারী করোনায় বিশ্বপরিস্থিতি এবং ব্রিটেনের ক্যারী ইন্ডাস্টির সংকটময় পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে বলেন,লাখো মানুষের মেধা,শ্রম ও ঘামে গড়ে ওঠা শতবছরের ঐতিহ্যের ফসল ব্রিটিশ ক্যারী ইন্ডাস্ট্রি যখন স্টাফ সংকটের কারণে অন্দ্বকার পথে যাত্রা করছিলো তখন সংকট নিরসনে সরকারের উদ্যোগে আশার আলোও পেয়েছিলো।কিন্তু করোনায় মরণ থাবা যেন সব কিছু ওলোটপালোট করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের পূর্বনপুরুষের অনবদ্য সৃষ্টি ব্রিটিশ ক্যারী ইন্ডাস্টি শুধু এ দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে না, এ ইন্ডাস্টি মানবিক বিপর্যয়ে মানবতার প্রতীক হিসেবেও কাজ করে নতুন ইতিহাস তৈরী করেছে।পান্ডামিকের বিপর্যয়ে মানুষ ছিল গৃহবন্দি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান , শিল্প কারখানার চাকা গুলো ছিল নিঃশব্দ। আর ক্যারী ইন্ডাস্টির সাথে সংশ্লিষ্ট রেস্টুরেন্ট মালিকরা জীবনের ময় ত্যাগ করে লকডাউনের মধ্যে রান্না করা খাবারের প্যাকেট নিয়ে দৌঁড়েছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে।অসহায় স্বজন হারাদের কাছে, বৃদ্ব স্বজন-সন্তানহীনদের দোয়ারে দোয়ার। মানবতার শক্তি যে কত দৃঢ় সেটা আমাদের এ ইন্ডাস্টির মানুষ গুলো প্রমান করেছে।
এনাম আলী এমবিই বলেন, ব্রিটেনের ক্যারী ইন্ডাস্টি পৃথিবীতে এটা প্রমাণ করেছে এ শিল্প শুধু নিজেদের আর্থিক উন্নতির জন্য নয়, মানবিক সংকটে একমাত্র তারাই মানুষের কাছে নিঃস্বার্থ পৌঁছে যায়। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাকে সম্মান করেছেন, ক্যারী শিল্পের সংকট মোকাবেলায় আমার বিভিন্ন দাবিকে সম্মান করেছেন, স্টাফ সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ থেকে স্টাফ আনার পথ তৈরী করে দিচ্ছেন,কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনার বিপর্যয়ে আমরা নতুন যে সংকটের মুখোমুখি হয়েছি সে বিপর্যয় কাটাতেও আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।এনাম আলী এমবিই ক্যারী শিল্পের উদ্যোক্তাদের এক এবং ঐক্যবদ্ব হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, পূর্বপুরুষের ঐতিহাসিক সৃষ্টি এ শিল্পকে বাঁচাতে হবে এবং নতুন প্রজন্মকে এর সাথে সংপৃক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক ট্রান্সপোর্ট মিনিস্টার ক্রিস গেইল এমপি,
ব্রিটিশ হাই কোর্টের জাজ স্যার আখলাক চৌধুরী কিউসি,জাজ স্বপ্নারা খাতুন। আইনজীবী ব্যারিস্টার লুৎফুর রহমান