হোম

সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা যা বলছেন –

সামরিক বাহিনীকে চলমান নিষ্ঠুর অপারেশন থেকে প্রত্যাহার করে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার আহবান

সুরমা ডেস্ক।। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত অবসরপ্রাপ্ত সামরিক সদস্যগণ এক বার্তায় বলেছেন চলমান পরিস্থিতিতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও হতাশ। সরকারি চাকরীতে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক কোটা নীতি বাতিলের ন্যায্য দাবী নিয়ে গত ১ জুলাই হতে কোমলমতি, নিরীহ, নিরস্ত্র শিক্ষার্থীগণ অত্যন্ত সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন শুরু করলে দেশের অসংখ্য মানুষের অকুন্ঠ সমর্থণ লাভ করে।

নিরাপত্তার প্রশ্নে নাম উল্লেখ না করে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের এই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সাথে লক্ষ্য করছি যে, সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ছাত্র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কোনরূপ আলাপ-আলোচনা না করে এ আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য হিংস্র রক্তাক্ত পথ বেছে নেয়। প্রথমে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র গুন্ডাবাহিনীকে নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর লেলিয়ে দেয়। তাদের বর্বরোচিত আক্রমণে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের অনেককেই নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় এবং অসংখ্য আন্দোলনকারীকে গুরুতর আহত ও গুম করা হয়। শুধু তাই নয় এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করতে বর্বর বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ও পুলিশের নির্বিচার আক্রমণ; ব্যবহার করা হয় হেলিকপ্টার ও স্নাইপার, যা যুদ্ধক্ষেত্রেও সাধারণত ব্যবহৃত হয় না। এ আক্রমণ এতোটাই বর্বর ও নৃশংস ছিল যে, হত্যার শিকার প্রতিটি মানুষের শরীর বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যায়, অন্ধ করা হয় বহু ব্যক্তিকে। এমনকি আক্রমণকারীরা হাসপাতালে গিয়েও গুরুতর আহতদের উপর নির্মম আক্রমণ চালায় এবং চিকিৎসা বঞ্চিত করে। যা কোন সভ্য দেশে কল্পনাও করা যায় না।  

অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, নির্লজ্জতা ও নির্মমতার এখানেই শেষ নয়; আন্দোলনকে দমাবার জন্য সরকার কারফিউ জারি করে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে নামায় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতিক দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে। লক্ষ্য করলাম, জাতিসংঘ মিশনে ব্যবহৃত এপিসি ও অন্যান্য অস্ত্র-সরঞ্জামাদিও ব্যবহার করা হয় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে। অতি উৎসাহী কিছু অফিসার বিবেক বিসর্জন দিয়ে আন্দোলনরত মানুষের উপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ব্রাশফায়ার করে। যা আমাদের কল্পনাকেও হার মানায়। বহু ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে অর্জিত গৌরব ধুলিস্যাত হয়ে যায় এর মাধ্যমে। অথচ বহু ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে গড়ে তোলা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের গৌরব আমাদের এ প্রাণের সেনাবাহিনী। সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বর্তমান প্রজন্ম আমাদের অনুজ, আমাদের ছোট ভাই-বোন ও সন্তান। তারা ইউনিফর্ম পরিধান‌ করে বিধায় অনেক কিছুই খোলাখুলি বলতে পারে না। তাই অগ্রজ হিসাবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা। সুতরাং আমরা জনগণের বিরুদ্ধে এসব হীন কাজ থেকে সামরিক বাহিনীকে বিরত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাই।

এতে আরো বলা হয়, এতো অল্প সময়ে নিজ দেশের মানুষের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় অর্থে লালিত বাহিনীসমূহের মাধ্যমে বিশাল এ হতাহতের নজির বিগত একশ বছরের ইতিহাসে এদেশে তো বটেই, বিশ্বের কোথাও মিলবে না। এমন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা বা ধিক্কার ও প্রতিবাদের উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। বিপুল এ প্রাণহানির দায় অবশ্যই সরকারের। সাংবিধানিক শপথ ও আইন উপেক্ষা করে সরকারের একাধিক মন্ত্রী প্রকাশ্যে চরম উস্কানীমূলক দায়িত্বহীন ভাষায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর তাদের লালিত গুন্ডাবাহিনীকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আদেশ দিলেন। এতে আমরা, সমগ্র জাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হতবাক, স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও গভীরভাবে মর্মাহত। রাষ্ট্র যখন আক্রমণকারী হয়, জনগণ বিচার চাইবে কার কাছে?

আমরা মনে করি, সংবিধান অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় কঠোর অবস্থান গ্রহন করতে হয়। কিন্তু তা কোনক্রমেই দেশ ও জনগনের স্বার্থ বিরোধী হওয়া কাম্য নয় এবং যতক্ষণ সে দায়িত্ব জনবিরোধী পর্যায়ে না পড়ে শুধুমাত্র ততক্ষণ সে দায়িত্ব পালন করা যেতে পারে। কিন্তু জনবিরোধী হওয়ার উপক্রম হলেই তা থেকে বিরত হওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়। এ বাহিনীর সকল সদস্যগণ এ দেশের সাধারণ জনগনেরই অংশ। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার উপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ তথা দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ সেই নিরিখে অবৈধ ও জনবিরোধী। এমনকি যে সংবিধানের দোহাই দিয়ে তাদের নিয়োজিত করা হয়েছে সে সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী ও একই সাথে ফৌজদারী অপরাধ।

বর্ণিত অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি, অবিলম্বে দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে এই নিষ্ঠুর অপারেশন থেকে প্রত্যাহার করে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হোক। একই সাথে সামরিক বাহিনীর সকল অফিসার ও সৈনিকদের উপরোল্লিখিত কার্যকলাপ থেকে বিরত থেকে সংবিধানের মূল দাবী অনুযায়ী জনগণের পাশে থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, এখনো সময় আছে সামরিক বাহিনীর ঘুরে দাঁড়িয়ে এ কলঙ্ক মুছে দেয়ার। একই সাথে গণহত্যার সাথে জড়িত পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও গুন্ডাবাহিনীর সদস্যদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি জনগণ এখনো সামরিক বাহিনীকে তাদের আশা ও ভরসাস্থল হিসেবে বিবেচনা করে। সামরিক বাহিনী সদাচরণশীল হলে জনগণের সে আস্থা আবার ফিরে আসবে। তবে তা হতে হবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আগেই। সে নিশ্চয়তা আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে দিতে পারি। আমরা মনে করি দেশের মালিক জনগণ, কোন ব্যক্তি নয়। মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ সুবাহানু ওয়াতায়ালা আমাদের সহায় হোন ।

  • দেশে বিদেশে অবস্থানরত সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যগণ
Tags
Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close