নিউজ

ইনকিলাব জিন্দাবাদ!

গুম, খুন, বিচারহীনতা, বাকস্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার হরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, লাগামহীন দুর্নীতি, ইতিহাস বিকৃতি, স্বজনপ্রীতি, একদলীয় শাসন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে সংবিধানের অবমাননার নিকৃষ্ট স্বেচ্ছাচারিতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার নগ্ন চেহারা দেখতে দেখতে ক্লান্ত, বিরক্ত দেশের মানুষ এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে। নিজের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের অবৈধ ও অনৈতিক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। কুখ্যাত স্বৈরশাসকদের মতো অজ্ঞাত স্থান থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে পলায়ন এবং তাঁর সরকারি বাসভবনে ঢুকে উন্মত্ত জনতার উল্লাস ও বাস ভবনে আগুন বিশ্ববাসীকে হলিউডি সিনেমার দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো শাসকই যে টিকে থাকতে পারেন না, বাংলাদেশ আবারও তা প্রমাণ করেছে।

যে প্রজন্মকে আমরা দেশ ও সমাজবিচ্ছিন্ন ভেবেছিলাম, সেই প্রজন্মই তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দলে দলে রাস্তায় নেমেছে। পুলিশের গাড়ি থেকে শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে শিক্ষক আহত হয়েছেন। আইনজীবীরা বলেছেন, ‘ওদের গ্রেপ্তার করার আগে আমাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছাড়াও যে নাগরিকেরা এতদিন নানা বৃত্তে বিভক্ত ছিলেন, তাঁরাও একত্র হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!

আমরা এই প্রজন্মকে নিয়ে যা যা ভাবতাম, ওরা আমাদের পুরোটাই ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। এই প্রজন্ম দেশের বিবেকের শূন্যতাই শুধু পূরণ করেনি, নেতৃত্বের দিশাহীনতাও কাটিয়ে দিয়েছে। দেশজুড়ে তাদের প্রতি নিরঙ্কুশ ভালোবাসা ও সমর্থনই এটা প্রমাণ করেছে। এই দেশটাকে আবার তারা আশাবাদী করে তুলেছে। আবার মানুষ ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। স্বপ্ন-দেখা মানুষ কতটা শক্তিমান হতে পারে, তা প্রিজনভ্যান রুখে দাঁড়ানো কিশোরীর ছবিটাই বলে দিয়েছে। দেশের মানুষকে শত্রু বানিয়ে দেশ চালানো যায় না, ভয়-ভাঙা দারুণ সাহসী বাংলাদেশ বিশ্বকে সেটাই জানিয়ে দিয়েছে ।

যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির চেয়ে দল বড় এবং দলের চেয়ে দেশ বড় হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজেকে দল ও দেশের ঊর্ধ্বে ভাবতেন এবং তাঁর গত ১৫ বছরের শাসনে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও দেশ ও দলের চেয়ে ব্যক্তি হিসেবে তাঁর একক কর্তৃত্বই দেখা গেছে। তিনি মানুষ হত্যা করে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। এমনকি পদত্যাগ ও পলায়নের আগের দিনও শেখ হাসিনা জনগণের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন দমনে রেব, পুলিশের সাথে দলের লোকজনকে অস্ত্রশস্ত্রসহ নামিয়ে দেশজুড়ে যে সহিংসতা-গণহত্যা ঘটিয়েছেন, মূল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন কলঙ্কজনক ঘটনার দ্বিতীয় কোনো নজির নেই। এই দায় থেকে তিনি কোনো দিন মুক্তি পাবেন না। তাকে এর দায় নিতে হবে, হত্যাকান্ডের বিচার হতে হবে।

গণঅভ্যুত্থানে আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। ছাত্র–জনতার এই অভ্যুত্থানে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, আমরা তাঁদের অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশের এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা ও দ্বিতীয় বিপ্লব যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close