কমিউনিটি নিউজবাংলাদেশ

ইউনুস সরকারের কাছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার জোটের ৫ দফা দাবি

  • সকল শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহতদের চিকিৎসা ও পূর্ণবাসন।
  • গণহত্যায় জড়িত ও সহযোগিদের আন্তর্জাতিক মানবতা বিরোধী আদালতে বিচার।
  • সকল রাজবন্দীর মুক্তি, নির্বাসিত লেখক-সাংবাদিকদের দেশে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান।
  • এক বছরের মধ্যে প্রবাসীদের এনআইডি ও ভোটাধিকার  নিশ্চিতকরণ এবং নির্বাচনে ভোট প্রদানের নিশ্চয়তাবিধান।
  • মানবাধিকারের সকল আন্তর্জাতিক ঘোষণা,কনভেনশন এবং বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা অনুসারে নতুন সংবিধান প্রণয়ন।

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।

লণ্ডন, ১৬ আগস্ট- বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকারের কাছে ৫ দফা দাবিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার জোট ‘গ্লোবাল বাংলাদেশী এলায়েন্স ফর হিউমান রাইটস (জিবিএএইচআর)’ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

১৪ আগস্ট বুধবার পূর্ব লণ্ডনের ‘জিবিএএইচআর’ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এতে অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মিসেস তালেয়া রেহমান। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন  ‘জিবিএএইচআর’ এর আহ্বায়ক শামসুল আলম লিটন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ ও গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়েছে যা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুন আকার দিয়েছে। গণহত্যা, দুর্নীতি, দমন-পীড়ন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। তার পদত্যাগ ও পলায়েনের মাধ্যমে একটি বিতর্কিত যুগের অবসান হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে দেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনসহ গণবিক্ষোভের মূল বিষয়গুলিকে সমাধান করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন এবং দেশকে স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ড. ইউনূস রাষ্ট্রীয় সহিংসতার শিকার মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথ প্রশস্ত করার অঙ্গীকার করেছেন। তার নিয়োগকে অশান্ত একটি দেশের জন্য আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সততার একটি নতুন স্তর নিয়ে আসবে এবং বাংলাদেশ প্রকৃত সংস্কারের দিবে বলে যাবে বলে ব্যাপক আশাবাদ রয়েছে’।

সংবাদ সন্মেলনে আরও বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ মানবাধিকার সংস্থাগুলি চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তনে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য এবং নাগরিক স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত পরিচালনা এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। বিক্ষোভের সময় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্মরণে শিশুদের অধিকার রক্ষায় নতুন করে ফোকাস করা হয়েছে’।

ভারতের সঙ্গে বন্দী প্রত্যার্পণ চুক্তির অধীনে অনুপ চেটিয়াসহ অসংখ্য বন্দী বিনিময়ের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলা হয়,’সাম্প্রতিক ছাত্র-গণহত্যার বিচারে ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশকে সহায়তা করা। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যেও এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।

সংবাদ সন্মেলনে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে ভারত থেকে ফেরত পাঠাতে ইউনুস সরকারের প্রতি কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ৫ দফা দাবি পেশ করা হয়।

দাবিগুলো হচ্ছে –

১. দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহতদের চিকিৎসা ও পূর্ণবাসন।

২. ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা, গুম ও বিচার বহির্ভূত সকল হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং তাদের সহযোগীদের আন্তর্জাতিক মানবতা বিরোধী আদালতে অবিলম্বে বিচার শুরু।

৩. গত ১৫ বছরে স্বৈরশাসন আমলে আটক সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং তাদের নিপীড়ণের শিকার হয়ে নির্বাসিত লেখক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান।

৪. আগামী ১ বছরের মধ্যে দেড় কোটি প্রবাসীর এনআইডি ও ভোটাধিকার  নিশ্চিতকরণ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভোট প্রদানের নিশ্চয়তাবিধান।

৫. মানবাধিকারের সকল আন্তর্জাতিক ঘোষণা, কনভেনশন ও বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা অনুসারে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সমাজের সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে নতুন সংবিধান প্রণয়ন।

সংবাদ সন্মেলনে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মীদের জোট ‘গ্লোবাল বাংলাদেশী এলায়েন্স ফর হিউমান রাইটস (জিবিএএইচআর)’  এর পক্ষে জাকির হাসান শিশির, শেখ আখলাক আহমেদ, হাসনাত আরিয়ান খান ও রাকেশ রহমানসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close