কমিউনিটি নিউজনিউজবাংলাদেশ

২৪-এর শহীদ স্মরণে অধ্যায় আয়োজিত “মৃত্যুর মিছিলে মানুষ” শীর্ষক আলোচনা ও কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত

মিনহাজুল আলম মামুন, ১৫ অক্টোবর-সাহিত্য ও সাংস্কৃতি সংগঠন ‘অধ্যায়’ এর উদ্যোগে গত ১৪ অক্টোবর, সোমবার, বিকেল ৫:৩০টায় লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভা ‘মৃত্যুর মিছিলে মানুষ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন।

‘অধ্যায়’ এর পুরোধা বিলেতের প্রধান কবি আহমেদ ময়েজ সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর সাপ্তাহিক সুরমা’র বার্তা সম্পাদক কবি কাইয়ুম আব্দুল্লাহ’র সঞ্চালনায় বিলেতের স্বনামধন্য কবিরা শহীদদের স্মরণে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন, আলোচকেরা আলোচনায় অংশ নেন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে দেড় সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন। শহীদদের প্রাণের দেহাবশেষ হয়তো মাটিতে মিশে গেছে কিন্তু তাদের আত্মত্যাগে রচিত হয়েছে শত শত কবিতা ও গান। কবিদের কবিতায় ফুটে উঠেছে বুলেটের আঘাতে রক্তাক্ত দেহের আর্তনাদ, প্রতিবাদী বজ্রধ্বনি। শহীদ আবু সাঈদের বুলেটে হারানো প্রাণ, শহীদ মুগ্ধ’র পানি বিতরণসহ জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের রক্তাক্ত চিত্র।

স্মরণসভায় স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন সাপ্তাহিক দর্পণ সম্পাদক ও লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি রহমত আলী, প্রফেসর কবি মিসবাহ কামাল, ‘বালাগঞ্জ প্রতিদিন’ এর প্রধান সম্পাদক কবি মুহাম্মদ শরীফুজ্জামান, কবি কামরুল বসির, বাংলা মেইল সম্পাদক ছড়াকার সৈয়দ নাসির, সাবেক কাউন্সিলর ও কবি-গীতিকার শাহ সুহেল আমীন, কবি কামরুল হাসান, ক্যালিওগ্রাফি শিল্পী শাহিনা পারভিন শিমু, মডেল ও অভিনয় শিল্পী দিলরুবা ইয়াসমিন রুহী, কবি কামরুল চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক কবি মাহবুব মুহাম্মদ এবং অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলনের আহবায়ক কমিটির সদস্য কবি ও সাংবাদিক মাহতাব উদ্দীন।

অনুষ্ঠানে জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ সঞ্চার ও উদ্দিপনা সৃষ্টকারী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন সাংবাদিক আলাউর রহমান খান শাহীন। গিটার বাজিয়ে গণঅভ্যুত্থানকালীন নজরুলের একটি গানসহ স্বরচিত দ্রোহী চরণ গেয়ে শোনান শিল্পী ও সুরকার গোলাম হায়দার রাসেল।

সাপ্তাহিক সুরমার প্রধান সম্পাদক, বিশিষ্ট কবি ও কলামিস্ট ফরীদ আহমদ রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুরমা সম্পাদক ও বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শামসুল আলম লিটন, লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়রের স্ট্র্যাটেজ্ক এডভাইজার মুহাম্মদ জুবায়ের এবং যুক্তরাজ্য সফররত সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও দৈনিক সিলেট ডটকম সম্পাদক কবি মুহিত চৌধুরী। আলোচনায় আরো অংশ নেন বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক ফারুক আহমদ, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক আবদুল মুনেম জাহেদী ক্যারল, বার্মিংহাম-মিডল্যান্ডস বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাংলা ভয়েস সম্পাদক মোহাম্মদ মারুফ, সাপ্তাহিক বাংলা সংলাপের বিশেষ প্রতিনিধি সাংবাদিক সাজু আহমেদ, অখণ্ড বাংলা আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আরিয়ান খান, প্রবাসী অধিকার পরিষদের সভাপতি জামান সিদ্দিকী ও সদস্য খন্দকার সাইদুজ্জামান সুমন।

স্মরণসভায় বক্তারা ও আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের কোন মাস্টারমাইন্ড নেই। ঐশ্বরিক “আবাবিল” এর ন্যায় অসীম সাহসী ছাত্র-জনতার একসাথে জেগে ওঠা এবং বন্দুকের গুলির সামনে বুক পেতে দেয়ার মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়েছে। যে মূলনীতির ভিত্তিতে দেশ স্বাধীন হয়েছিল দীর্ঘ স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদী মাফিয়াতন্ত্রের কারণে তা ভুলণ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। ছাত্র-জনতার সাহসী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেটি আবার ফিরে এসেছে। অনেকগুলো তাজা প্রাণ এবং অসংখ্য পঙ্গুত্বের বিনিময়ে অর্জিত এই সাফল্যকে যে কোনকিছুর বিনিময়ে ধরে রাখতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌছাতে হবে। ছাত্র-জনতা-সাংবাদিকসহ যারা আহত হয়েছেন তাদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। আহতদের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আহতদের জন্য মাত্র ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয়। এটা বাড়াতে হবে। দেশে যেনো আর কোনদিন ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে না আসে তাঁর জন্য সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। আর তা না হলে এই বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য সাংবাদিক জাকির হোসেন কয়েস, এনটিভির সিনিয়র সংবাদ উপস্থাপক শামসুল তালুকদার, বাংলা টিভির ব্যুরো চিফ চৌধুরী মুরাদ, সাংবাদিক হাসনাত চৌধুরী, সুরমা ডিজিটাল টিমের প্রধান সাংবাদিক মিনহাজুল আলম মামুন, চ্যানেল এস এর সিনিয়র রিপোর্টার রেজাউল করিম মৃধা, আইআন টিভির সিনিয়র রিপোর্টার হেফাজুল করিম রাকিব ও আলোকচিত্রী নোমান আহমদ প্রমুখ।

উপস্থিত দর্শনার্থীরা বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে ‘অধ্যায়’ এর এমন উদ্যোগ ভালো লেগেছে। শহীদদের স্মরণে এমন অনুষ্ঠান আরো বেশি বেশি হওয়া উচিত। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লব পরিস্থিতি এবং এর প্রেক্ষাপট বার বার তুলে ধরা উচিত।

আয়োজক সংগঠন ‘অধ্যায়’ এর পক্ষ থেকে বিশিষ্ট কবি ও মরমী তাত্ত্বিক আহমদ ময়েজ বলেন, আগামীতে তাঁরা আরো বড় পরিসরে এমন আয়োজন করবেন। আগামীতে বড় পরিসরে শিল্প-সাহিত্যে আগষ্ট বিপ্লবের চিত্র তুলে ধরবেন। শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি আন্দোলন চলাকালীন দেয়াল লিখনগুলো নিয়ে বিশেষ একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করবেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ ও মাফিয়াতন্ত্রের অবসানে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থান ও আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে বিলেতে এই প্রথম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অধ্যায়’। অনুষ্ঠানটির সহযোগিতায় ছিলো যুক্তরাজ্যভিত্তিক ২২টি মানবাধিকার সংগঠনের জোট গ্লোবাল বাংলাদেশি অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস (জিবিএএইচআর)।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close