নিউজবাংলাদেশ

হাসিনার ‘পদত্যাগ পত্র’ ইস্যুতে জল ঘোলা করছেন চুপ্পু

।। সুরমা ডেস্ক ।।

লণ্ডন, ২২ অক্টোবর- সম্প্রতি ঢাকার জেলা আদালত প্রাঙ্গণে গাউন পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তির শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান, সোশ্যাল মিডিয়ায় এক শ্রেণির ইউটিউবারের ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিরোধী প্রপাগান্ডা অনেকের নজর কেড়েছে। এই প্রপাগান্ডায় উস্কানি দিয়ে হাসিনার পদত্যাগ পত্র ইস্যুতে নতুন করে জল ঘোলা করছেন চুপ্পু। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি প্রেসিডেন্ট চুপ্পুর কাছে কোনো ধরনের ‘পদত্যাগপত্র’ দিয়ে যাননি! পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্রই নাকি তার কাছে নেই। প্রসঙ্গটি এসেছে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদককে প্রেসিডেন্ট মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর দেয়া ‘বিশেষ সাক্ষাৎকার’কে কেন্দ্র করে। যেখানে প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে কোনো পদত্যাগপত্র দিয়ে যাননি।

প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্য সমালোচনার ঢেঁউ তুলেছে সারা দেশে। প্রেসিডেন্টের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা। বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারিতার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ইস্যুতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু মিথ্যাচার করেছেন। গত সোমবার তার দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ড. আসিফ নজরুল আরো বলেন, তার (প্রেসিডেন্ট) এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি-না এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টা আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। কারণ তিনি নিজেই গত ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। তাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে নেই বলে প্রেসিডেন্ট যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার স্ববিরোধী বক্তব্য।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, গত ৫ আগস্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের অভিমত বা রেফারেন্স জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের অন্য সব বিচারপতি মিলে একটি অভিমত দেন, যার প্রথম লাইনটি হচ্ছেÑ ‘দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন…।’ আসিফ নজরুল বলেন, এই রেফারেন্সটিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির স্বাক্ষর রয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তি পুরো জাতির সামনে ভাষণ দিয়ে বলেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের অভিমত পাওয়ার পরও তিনি কিভাবে ওই বক্তব্য দেন সেটি বোধগম্য নয়। প্রায় আড়াই মাস পরে আজকে যদি প্রেসিডেন্ট বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র দেননি তাহলে এটি তো স্ববিরোধিতা হয়।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়। আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট মন্ত্রণালয় থেকে প্রেসিডেন্টের দফতরে পাঠানো হয়। প্রেসিডেন্ট এই অভিমতটা দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর তিনি নিজে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন।

এখানে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। উনার বক্তব্য, উনার কর্মকাণ্ডে উনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এখন স্ববিরোধী কথাবার্তা বলার কোনো সুযোগ নেই। যদি উনি এই বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে উনার প্রেসিডেন্টের পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি-না সেটি আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে। আমরা জানি, বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে আপনার যদি শারীরিক মানসিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন তখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকতে পারেন কি-না, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আমাদের সংবিধানে রয়েছে। একজন সর্বোচ্চ পদে থাকা মানুষ পুরো জাতির সামনে ভাষণ দিয়ে কীভাবে তিনি বলতে পারেন এটি আমাদের বোধগম্য না।

পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রের কাছে দেখাতে পারবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে প্রেসিডেন্টের কাছেই পদত্যাগ করেন। সেটি প্রেসিডেন্টের দফতরেই থাকার কথা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, এ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। যেহেতু পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন বলেছেন, এখন বলছেন করেননি, তাহলে উনি কি করেছেন পদত্যাগপত্র সেটি উনাকেই জিজ্ঞেস করেন।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পাত্তারি গুটিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অবৈধ চোরাপথে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয় আ.লীগের কিছু পাতিনেতা। এসব নেতা নাকি ত্রিপুরার আগরতলায় জড়ো হচ্ছেন! শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারা নাকি ‘প্রবাসী সরকার’ গঠন করছে! চটকদার থাম্বনেইল দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়া এসব ডিজিটাল কিসসা-কাহিনী কিছু মানুষের ‘ভিউ’ কুড়াচ্ছে বটে। কিন্তু সচেতন মহল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এসবই ‘গাঁজাখুরি গল্প’। পতিত হাসিনার ফ্যাসিবাদের হতাশ সমর্থকরা এসবের মধ্যে এখন সান্তনা খুঁজছে। জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত বিপ্লবই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় বৈধতা বলে মনে করেন তারা। তাই উপরোক্ত মৌলিক প্রশ্ন এড়িয়ে ‘ইস্যু করা হচ্ছে হাওয়ায় পাওয়া’ বিষয়। যা ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে। নিমজ্জিত জাহাজের যাত্রী খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। সমূলে উৎপাটিত ফ্যাসিবাদীরা তাই করছে। ‘হাওয়া থেকে পাওয়া’ গুঞ্জনই তাদের এখন ‘খড়কুটো’। অবাস্তব, অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিক বিষয়াদিকে পুঁজি করছে তারা। উদ্দেশ্য- পানি ঘোলা করা। মীমাংসিত, তুচ্ছাতিতুচ্ছ এবং অতীতের ঝাঁপসা বিষয়াদি সামনে এনে বর্তমানকে ‘গৌণ’ করা। জাতির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে নিপতিত করা।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close