নিউজ

আগস্ট গণঅভ্যূত্থান একদিন বিশ্ব ইতিহাসে স্থান করে নিবে: ড. মঈন খান

জাতীয় প্রেসক্লাবে অলি আহাদ স্মরণ সভা

ঢাকা অফিস।‌। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা, চির বিদ্রোহী, আপসহীন জননেতা অলি আহাদ এর ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ অক্টোবর শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ডেমোক্রেটিক লীগ-ডিএল এবং অলি আহাদ স্মৃতি সংসদ এর যৌথ উদ্যোগে স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

ডেমোক্রেটি লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত’র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস এর পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান। প্রধান বক্তব্য হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন মানুষের সত্যিকার মুক্তির জন্য অলি আহাদ নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তরুণ প্রজন্মকে অলি আহাদের জীবন থেকে ত্যাগ শিখতে হবে। ব্রিটিশ তাড়ানো আন্দোলন ও মুক্তির সংগ্রামে অলি আহাদের ভূমিকা ছিল সাহসী ও প্রাসঙ্গিক। ব্রিটিশরা চলে গেলেও স্বাধীন পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন ছিল না। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার আন্দোলনের কারণে অলি আহাদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে অলি আহাদ যে ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন সেই ভূমিকায় অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণ প্রজন্ম ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট গণঅভ্যূত্থানের যে ঐতিহাসিক বিজয় হয়েছে সেই বিজয় একদিন সারা বিশ্বে রোমান্টিক রেভ্যুলিউশন হিসেবে ইতিহাস করে নিবে।

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন জননেতা অলি আহাদ’এর কন্যা বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়কারী এনপিপির চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, গণদলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম গোলাম মাওলা, গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপি’র মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপি’র মহাসচিব মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, ডিএলএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মাজহারুল হক মিঠু, সহ-সভাপতি বাবু সুজন চক্রবর্তী, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি এস এম জামাল উদ্দিন, বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, প্রকৌশলী মোঃ শাজাহান, সমমনা জোটের নেতা আমির হোসেন আমু সহ প্রমুখ।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন শ্রদ্ধেয় নেতা অলি আহাদ। নিষ্ঠা, সততা, স্পষ্টবাদীতা দিয়ে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল করে রেখেছেন। অলি আহাদকে অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতা আকৃষ্ট করতে পারেনি। অলি আহাদের অনেক কথা অনেকের পছন্দও হয়নি। কিন্তু এসব কথা যুক্তিযুক্ত ছিল বলে কেও অগ্রাহ্য করতেও পারেনি।অলি আহাদের কন্যা, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, রাজনীতিবিদ অলি আহাদ এতবড় মাপের নেতা ছিলেন যার সম্পর্কে বলার যোগ্যতা আমার নেই। তবুও রক্ত কথা বলে। আমার ধমনিতে তাঁর রক্ত প্রবাহিত। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা হচ্ছেন আমার বাবা অলি আহাদ। উনি ছিলেন আমার শিক্ষক, তিনি আমাকে জীবনবোধ শিখিয়েছিলেন। উনি বলতেন পিছনের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকাতে হবে। উনি সব সময় সাদা সিদে জীবন যাপন এবং উচ্চতর চিন্তা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বলেছেন। সব সময় তিনি বলতেন সাহসের সাথে চল। আল্লাহর উপরে ভরসা করে চল।নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অলি আহাদ স্পষ্টবাদী নেতা ছিলেন। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সব সময় ছিলেন।গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, অলি আহাদ ছিলেন কীর্তিমান রাজনীতিবিদ। ব্যক্তি অলি আহাদ সম্পর্কে সবার উঁচু ধারণা ছিল। তিনি রাজনীতিকে ব্যবহার করে কোনদিন ব্যক্তিগত সুবিধা নেননি। জাতির অধিকার ও মর্যাদার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে ডেমোক্রেটিক লীগ সভাপতি মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত বলেন, জাতীয় নেতা অলি আহাদ আজীবন ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসা, সৎ নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য এবং দেশ-জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগ করার শিক্ষা দিয়ে গেছেন। মন্ত্রী-রাষ্ট্রপতি না হওয়াটা অগৌরবের কিছু নয়। নীতি-আদর্শে অটল থেকে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করার মধ্য দিয়ে যে অকৃত্রিম ভালবাসা-শ্রদ্ধা- স্নেহ পাওয়া যায় তা একজন রাজনীতিবিদের জীবনে বড় অর্জন। সংগ্রামী নেতা অলি আহাদ তা অর্জন করেছিলেন। তিনি সৎ ছিলেন। সেই কারণেই সৎ, চরিত্রবান, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মর্যাদা দিতেন। অলি আহাদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল বড় না হলেও রাষ্ট্র পরিচালনা করার মত বিভিন্ন পেশাজীবিদের একটি টিম তাঁর দলে ছিল।

ডেমোক্রেটিক লীগের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত তুলে ধরে বর্তমান সভাপতি কাদেরী শওকত বলেন, অলি আহাদ যখন ডেমোক্রেটিক লীগে সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন তখন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাহ্ মুয়াজ্জম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন কে.এম. ওবায়দুর রহমান, পীর মোহসেন উদ্দিন দুদু মিয়া, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, মোতাহের হোসেন সিদ্দিকীসহ দেশবরণ্য ব্যক্তিবর্গ। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে সহ-সভাপতি ছিলেন যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী আলহাজ্ব মাহমুদুন্নবী চৌধুরী। তার মেজছেলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এখন বিএনপি’র বড় নেতা, স্থায়ী কমিটির সদস্য, কারা নির্যাতিত। ১৯৭৭ সালে জাপানী বিমান হাইজ্যাকের সাথে জড়িত থাকার মিথ্যা অজুহাতে তৎকালীন সরকার ডেমোক্রেটিক লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি ও জাসদকে নিষিদ্ধ করেছিল।

ডেমোক্রেটিক লীগ নেতা শাহ মুয়াজ্জেম, কে.এম ওবায়দুর রহমান, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনসহ জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ করে মার্শাল ডেমোক্রেসি চালু করেছিল। ঐ মার্শাল ল’ডেমোক্রেসির বিরুদ্ধে অলি আহাদ সোচ্চার ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, উপমহাদেশে বৃটিশ ভারতে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মহাত্মা গান্ধী, পন্ডিত নেহরু, সুভাষ বসু যে মানের নেতা ছিলেন পরবর্তী প্রজন্মের হলেও অলি আহাদ সেই মানের নেতা ছিলেন। সাথে সাথে মজলুল জননেতা মাওলানা ভাসানীর ভাব শিষ্য হিসেবে সকল প্রকার প্রলোভনের উর্ধ্বে থেকে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর প্রতিটি সরকার তাকে মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

সভার শুরুতে ভাষা আন্দোলনের সিপাহসালার অলি আহাদসহ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪’র গণঅভূত্থানে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।


Tags
Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close