নিউজ

সিলেটের পলাতক মন্ত্রী এমপি নেতাদের শিলং গোয়াহাটিতে বিলাসবহুল জীবন, কোটি কোটি টাকা যাচ্ছে হুন্ডিতে

আবদুল কাদের তাপাদার, সিলেট থেকে :
৫ আগস্ট ছাত্র জনতা র রক্তাক্ত গণবিপ্লবে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেটের মন্ত্রী এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা যে যেভাবে পারেন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের দিন ৫ আগস্ট বিকেল থেকে গভীর রাত অবধি সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা ও গোয়াইনঘাটের মাতুলতল সীমান্ত দিয়ে কয়েকশ’ নেতা কর্মী বন জঙ্গল পেরিয়ে স্থানীয় দালাল ও প্রভাবশালীদের নানারকম সাহায্য সহযোগিতায় অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যান। এদের বেশিরভাগই ভারতের
শিলং গোয়াহাটি ডাউকি শহরে বিলাসবহুল হোটেলে ও বাড়ি ভাড়া নিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। তারা সেখানে টাকা পয়সার কোনো অভাববোধ করছেন না।

বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তাদের হাতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।ভারতে তারা অবৈধ হলেও সেখানকার পুলিশ বিশাল বাজেটের টাকার বিনিময়ে তাদের জন্য বিশেষ পাসকার্ড ইস্যু করেছে বলে সীমান্ত এলাকার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ভারতে পলাতক মন্ত্রী এমপি নেতাদের কেউ কেউ ভারতীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নেপাল হয়ে ইউরোপের যুক্তরাজ্য ও আমেরিকায় পাড়ি জমাতে সক্ষম হয়েছেন। সীমান্ত পাড়ি দিতে না পেরে আবার সিলেটের কোনো কোনো ভিআইপি দেশে অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনুসন্ধানে পতিত সরকারের মন্ত্রী এমপি ও নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার নানা গল্প বেরিয়ে এসেছে।

সূত্র জানিয়েছে, কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মন্ত্রী, এমপি, মেয়রসহ ভিআইপিরা সিলেট সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গেছেন। দালাল সিন্ডিকেটের সহায়তায় কেউ কেউ ভারতে ঢুকতে কোটি টাকাও গুনেছেন। তবে ২০ লাখের নিচে কেউ ঢুকতে পারেননি। কেউ আবার খুইয়েছেন মোটা অঙ্কের নগদ টাকা ও ডলার। কাউকে দিতে হয়েছে জীবনও। তবু ভারতে পালানোর মিছিল থামছে না। এ সুবাদে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা চিহ্নিত দালালরা হচ্ছে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ । অভিযোগ আছে, ভিআইপিদের অনেকে পার হওয়ার সময় দুদেশের প্রশাসনের লোকজনের সহায়তা নিয়েছেন। জড়িত আছেন ট্রেভেল ব্যাবসায়িরাও। যদিও এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। আওয়ামী ফ্যাসিজমের সাজানো প্রশাসন হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অনেকে তাদের নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়তে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন। আবার কারও কারও মোটা অঙ্কের টাকা তৃতীয় পক্ষ পুরোটাই গায়েব করে দিয়েছেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে,আওয়ামী ভিআইপিদের অনেকে ভারত থেকে দালালের মাধ্যমে নেপাল হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত দেশে। কেউ কেউ ভারত থেকে সরাসরি চলে গেছেন ইউরোপের কোনো দেশে। যেখানে আগে থেকেই তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। কারও কারও স্ত্রী-সন্তানও নাগরিকত্ব নিয়ে আছেন বহাল তবিয়তে।

এদিকে,সিলেট সীমান্ত থেকে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আটক ও সীমান্তের ওপারে ছাত্রলীগের এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না নিহত হওয়ার খবরটি বেশ আলোচিত হয়েছে। তবে এরপর থেকে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর কারণে বর্তমানে পালিয়ে যাওয়ার সংখ্যা কমে এসেছে।

সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন বৃহত্তর সিলেটের কয়েকশ’ নেতাকর্মী ৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পরপরই ভারত পালিয়েছেন। প্রথম দিনই (৫ আগস্ট) সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছাড়েন ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে একদল নেতা কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, সাবেক এমপি এডভোকেট রঞ্জিত সরকার, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব,আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদসহ বহু নেতা ডোনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। শিলংয়ে অবস্থান করা কয়েকজন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংসহ কয়েকটি এলাকায় ওখানকার পুলিশের কাছ থেকে অস্থায়ী পাসকার্ড নিয়ে অনেকেই অবস্থান করছেন। আবার অনেকেই আছেন অবৈধভাবে। রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে তেমন কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে না। ফলে বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা নিরাপদেই বসবাস করতে পারছেন।

তবে কতোদিন পর্যন্ত তারা অবস্থান করতে পারবেন, সেটি নিয়ে চিন্তিত দেশে থাকা নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে সিলেটে দায়ের করা একাধিক মামলায়ও তারা আসামি হয়েছেন। অপরদিকে, সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন সিলেট সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে নেতারা ভারতে প্রবেশ করেন। এসব সীমান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী ঢুকেছেন কানাইঘাটের ডোনা ও সুরইঘাট এলাকার সনাতনপুঞ্জি সীমান্ত দিয়ে।

ডোনা সীমান্তে দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় বিজিবি’র হাতে আটক হয়েছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক। গ্রেপ্তারের পর বহুল আলোচিত এ সাবেক বিচারপতি নিজেও জানিয়েছিলেন সীমান্তে দালাল ধরে তিনি ভারতে প্রবেশের চেষ্টা চালান। পরে ওই দালালরাই তাকে মারধর করে সঙ্গে থাকা ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। বিচারপতি আটকের পর ঘটনাটি জানাজানি হলে পাচার কারীরা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীজানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী পান্নাও ওই সীমান্তের আরেকটি পয়েন্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। ডোনা সীমান্তের ওপারে ভারতের অংশে একটি টিলার পাদদেশে তার মরদেহ পাওয়া যায়। সীমান্তের দালালরাই তাকে হত্যা করে সঙ্গে থাকা সব টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, গোয়াইনঘাটের মাতুরতল সীমান্ত এলাকা দিয়ে শতাধিক নেতাকর্মীদের ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট ছাত্রলীগের সভাপতি সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদক রাজীবের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী এ সীমান্ত দিয়ে পাড়ি জমান। তারা নিজেরাও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। সীমান্ত চোরাকারবারি দুলালসহ কয়েকজন তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছেন হাজীপুর, মাতুরতল এলাকার বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন ওই এলাকায় বিজিবি ক্যাম্প আক্রান্ত হওয়ার পর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা কম ছিল। এই সুযোগে ওই এলাকা দিয়ে নেতাকর্মীরা ভারতে পালায়। এ ছাড়া আসামপাড়া, সোনাটিলা দিয়েও নেতাকর্মীরা ভারতে প্রবেশ করেছেন বলে জানা যায়।

ভারত লন্ডন আমেরিকায়
পলাতক সিলেটের ভিআইপিরা:

শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের হর্তাকর্তা।

জানুয়ারীর ভোটারবিহীন একদলীয় নির্বাচনে মৌলভীবাজার -২ কুলাউড়া আসন থেকে এমপি হন। এরশাদের সরকারের একসময়ের অর্থ উপদেষ্টা আবদুল মাল আবদুল মুহিতকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসার অন্যতম কারিগর তিনি। সরকারের প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী আবদুল মাল আবদুল মুহিতের ডানহস্ত হয়ে উঠেন তিনি। নাদেল নিজে একজন ঠিকাদার ও বড় ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে সিলেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের শতো কোটি কোটি টাকার প্রকল্প , আবদুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স, সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের সবকিছুই হয়েছে তার হাত ধরে। অর্থমন্ত্রী আবুল মুহিতের ডান হাত সেজে সিলেটকে উলট পালট করেছেন নাদেল। দলের সিলেট মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে ডজন নেতাকে পেছনে ফেলে সরাসরি হয়ে গেছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। ক্ষমতাকে একচেটিয়া নিজের মতো ব্যবহার করেছেন। প্রশাসনে রদ বদলের অন্যতম কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন। ঐতিহ্যবাহী সিলেট চেম্বারকে দু টুকরো করেছেন । সিলেট মেট্রোপলিটান চেম্বার নামে আরেকটি পকেট সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন। সিলেটের ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ – কেমুসাস এর নির্বাচন ভন্ডুল করতে গুন্ডা পান্ডা লেলিয়ে গুলি করেছেন, হামলা চালিয়েছেন।যা সিলেটে নজিরবিহীন ঘটনা। এরকম শতো অভিযোগ শফিউল আলম নাদেল এর বিরুদ্ধে। ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
কিন্তু ৫ আগস্টের পর দেশে থাকতে পারেননি। নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে লন্ডন যেতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত অবৈধ পথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
২১ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভোটারবিহীন নির্বাচনে মেয়র পদে বসেন।

৫ আগস্টের পর সরকার দেশের সকল মেয়রকে বরখাস্ত করে। বরখাস্ত হন সিলেট আওয়ামী লীগে উড়ে এসে জুড়ে বসা এই উচ্চাভিলাষী নেতা। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সিলেটের আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে কোনো কালেই তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। কিন্তু শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ ভাজন বলে পরিচিত আনোয়ারুজ্জামান দীর্ঘ দিন ধরে মাঠ কাঁপানো হাফ ডজন নেতাকে বসিয়ে রেখে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বসেন। তিনি হয়ে উঠেন সিলেটের রাজনীতির মা বাপ।

জানা গেছে, কয়েক শ’ কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে তিনি শেখ রেহানার কাছ থেকে মেয়র পদ কিনেন বিজয়ের নিশ্চয়তা নিয়ে।
বড় বড় প্রকল্প পাশ করে দেয়ার বিনিময়ে কমিশন বাণিজ্য তার মূল পেশা ছিল। ৫ আগস্টের পর নানারকম চেষ্টা তদবির চালিয়ে ভারত হয়ে যুক্তরাজ্য পাড়ি জমান ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।লন্ডনে পৌঁছে লাইভে এসে তিনি গলা ফাটিয়ে বলেন, পালিয়ে আসিনি। অবস্থান পরিবর্তন করেছি মাত্র । এখনো মাঝে মধ্যে তিনি লাইভে এসে নানারকম উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

ইমরান আহমেদ

জেলা আওয়ামী লীগের সহ -সভাপতি। সাবেক প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী।
সিলেটের সবচেয়ে গরীব ও দারিদ্রপীড়িত এলাকা জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি। এক সময়ে খাসিয়া রাজা শাসিত এই অঞ্চলে গত চার দশক ধরে রাজার আসন গড়ে তোলেন ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিক ইমরান আহমেদ।ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বৈধ অবৈধ পথে গড়ে তুলেছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় মন্ত্রী থাকাবস্থায় চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সম্প্রতি দুদক এই ধনবান এমপির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
কিন্তু এর আগেই তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জায়গা দখল করে চা বাগানের আয়তন বাড়ানো ও জাফলং ভ্যালি স্কুল স্থাপনের অভিযোগ রয়েছে।

নাসির উদ্দীন খান
সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত নাসির খান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নানা লুটপাটের সাথে জড়িত। ৫ আগস্টের পর তিনি কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়েছেন।

সারওয়ার হোসেন

এক সময়ের শেখ হাসিনার খুবই ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সিলেটের বিয়ানীবাজারের অধিবাসী সারওয়ার হোসেন বদলী বাণিজ্যের এক বড় কারিগর ছিলেন। বড় বড় কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে ভালো চাহিদামতো জায়গায় পোস্টিং দিতেন। একসময় তিনি সিলেটের পাথর কোয়ারীতে প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এইচটি ইমামের হয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।পাথর কোয়ারীতে তার নামে চলতো নিরব চাঁদাবাজি। গত ২ সেপ্টেম্বর তিনি তামাবিল সীমান্ত পেরিয়ে ভারত পাড়ি জমান বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ড: এ কে আবদুল মোমেন

সিলেট -১ আসনের সাবেক এমপি ও পতিত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড: এ কে আবদুল মোমেন।
গত জুলাইয়ে আমেরিকা গিয়েছিলেন সপরিবারে। কিন্তু ২ আগস্ট তিনি দেশে ফিরে আসেন।৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি আমেরিকা ও ভারতে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করলেও কামিয়াবি হাসিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় তিনি আছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ঢাকা -সিলেট চারলেন মহাসড়ক নিয়ে মহাদুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত এই মন্ত্রীর কারণে মহাসড়কের কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে একসময়। এজন্য তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভর্ৎসনার শিকার হন। সিলেটে উন্নয়নের নানা প্রকল্পে তার দুর্নীতির কারণে কাজের নামে লেফাফাদুরস্ত হিসেবে কাজ হয়েছে। ভারতকে বাংলাদেশের স্বামী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন।

নুরুল ইসলাম নাহিদ

বিয়ানীবাজার – গোলাপগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি, সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী।

৫ আগস্টের পর কমিউনিস্ট পার্টির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ঢাকার বাসায় ১৫/১৬ দিন ছিলেন। পরে লন্ডন ও ভারত পালানোর চেষ্টা করেন। মন্ত্রী থাকাবস্থায় ভারতে বই ছাপানো হয়।এসময় সেদেশের একটা বড় প্রকাশকের সাথে তার দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রকাশকের নিকট থেকে বড় অংকের কমিশনও আদায় করেন তৎকালীন এই মন্ত্রী। সেই সম্পর্কের সুবাদে তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে একটা সূত্র দাবি করছে।আবার অন্য একটা সূত্র মতে,তিনি লন্ডনে পাড়ি জমাতে ব্যর্থ হয়ে রাজধানী ঢাকাতেই আছেন।

রনজিত সরকার
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সুনামগঞ্জ -১ আসনের সাবেক এমপি।

সিলেটের টিলাগড় কেন্দ্রীক সন্ত্রাসী ও খুনিচক্রের মূল নেতা। তার হাতেই টিলাগড়ে নিজ দলের ৯/১০ জন নেতাকর্মীসহ গত ১৬ বছরে অনেকেই খুন হয়েছেন। এমসি কলেজে ছাত্রাবাস পুড়ানো, বেপরোয়া চাঁদাবাজিসহ নানা ভয়ানক রকম কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রনজিত সরকার। ছাত্র নেতা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হওয়া এই রনজিত সরকার লুটপাট, চাঁদাবাজি, খুন খারাবির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক এখন। ৫ আগস্টের পর রনজিত সরকার অবৈধ পথে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

আজাদুর রহমান আজাদ।সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
টিলাগড়ের রনজিত সরকারের সহযোগী আজাদুর রহমান আজাদ সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়ানোর মূল কুশীলব। আগুনে জ্বালিয়ে এই ছাত্রাবাসের পুনর্নির্মাণের কাজ আবার তিনিই করিয়েছে দু’হাতে টাকা কামাই করেছেন। টিলাগড় পয়েন্টে নিজদলের নেতাকর্মী খুনসহ ভয়ানক সব অপরাধের সাথে জড়িত এই আজাদুর রহমান আবার সিসিকের কাউন্সিলর হিসেবে এলাকায় সবরকম বিচার আচারের সালিশি ব্যক্তিও বটে। ৫ আগস্টের পর বন্ধু রনজিত সরকারের মতো তিনিও ভারতে পালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

শাহাব উদ্দিন

মৌলভীবাজার -১ বড়লেখা – জুড়ী আসনের সাবেক এমপি, সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিজের পারিবারিক বলয় নিয়ে বড়লেখায় রাজতন্ত্রের মতো রাজত্ব কায়েম করেন। নিজের রাজনৈতিক গুরু, এলাকার জনপ্রিয় সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে তাকে প্রাণনাশের গুরুতর অপবাদ তুলে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সিমপিথি আদায় করেন। অপবাদে আক্রান্ত সিরাজুল ইসলাম দল ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত আমেরিকায় চলে গিয়ে করোনার সময় ইন্তেকাল করেন। শাহাব উদ্দিন ঢাকায় এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন রয়েছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে এমপি মন্ত্রী হওয়ার পর বদলে যান শাহাব উদ্দিন। ভালো মানুষের আড়ালে এক ভয়ংকর আকৃতি ধারণ করেন তিনি। দলকে পারিবারিক বলয়ে আবদ্ধ করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেন। তার লন্ডন প্রবাসী ছেলে জাকির হোসেন জুমন,ভাগনা সাবেক বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শোয়েব আহমদ, আরেক ভাগনা বড়লেখা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালেহ আহমদ জুয়েল ক্ষমতাতার কেন্দ্রবিন্দু দখলে নেন। স্থানীয় সকল উন্নয়ন প্রকল্প তার নিজের একটা চক্র নিয়ন্ত্রণে নেন। আর মন্ত্রণালয়ের বড় বড় প্রকল্পের দেখভাল করেন ছেলে জাকির হোসেন জুমন। পাথারিয়া পাহাড়, হাকালুকি হাওর থেকে শুরু করে সবজায়গায় চলে লুটপাটের মহোৎসব। মন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কবিরুজ্জামান চৌধুরী শত কোটি টাকার মালিক। তার আশপাশের অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ। ৫ আগস্টের পর অবৈধ পথে সীমান্ত পেরিয়ে সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। বৃটিশ পাসপোর্টধারী ছেলে জাকির হোসেন জুমন লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছেন। ভাগনা শোয়েব আহমদও ভারতে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। আরেক ভাগনা বড়লেখা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালেহ আহমদ জুয়েল বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে সিলেট এয়ারপোর্টে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পতিত সরকারের কৃষি মন্ত্রী।

মৌলভীবাজার -৪ শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি। সাবেক সরকার দলীয় চীফ হুইপ। কলেজের উপাধ্যক্ষ ছিলেন বলে মূল নামের সাথেই এই পদবি জুড়ে দিয়ে হাসির খোরাক জুগিয়েছেন।তার নাম শুধু আবদুস শহীদ নন। উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ।
চা বাগান ও শ্রমিক অধ্যুষিত এই এলাকা থেকে বার বার এমপি হলেও চা বাগানের শ্রমিকদের উন্নয়নে তার কোনো ভূমিকা নেই।
রাজনীতি করে চার দশকে টাকার পাহাড় গড়েছেন। ৫ আগস্টের পর এলাকার একজন ভিন্ন দলীয় জনপ্রতিনিধির আশ্রয়ে ছিলেন কয়েক দিন। এরপর বন জঙ্গল পেরিয়ে অবৈধ পথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ( শান্তিগঞ্জ) ও জগন্নাথপুর এলাকার সাবেক এমপি, পতিত সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী এম, এ মান্নান কারাগারে রয়েছেন।তার বিরুদ্ধে হওয়া একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জে যুগান্তকারী উন্নয়ন কাজ করলেও ফ্যাসিবাদের সহযোগী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মনে করেন এলাকার রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরা। এম,এ মান্নানকে গ্রেফতারের পর এলাকায় তার পক্ষে মিছিল ও সড়ক অবরোধ হয়েছে।

মুহিবুর রহমান মানিক
সুনামগঞ্জ -৫ ছাতক দোয়ারা বাজার আসনের সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিক।

১৯৯১ সালে ছাতক উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।পরবর্তীতে তার রাজনৈতিক গুরু সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের সাথে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে এমপি থাকাবস্থায় ছাতক শহরের মন্ডলীভোগে তার বাসায় বোমা বানানোর সময় বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় কয়েকজন নিহত হন।এই ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত হয়ে উঠেন এমপি মানিক। তার বিরুদ্ধে মামলা হলে এমপি মানিককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সময়ে ছাতক দোয়ারাবাজার এলাকায় তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার লাভ করে। দেশের সবচেয়ে লাভজনক ছাতক সিমেন্ট কারখানায় কয়েক শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হলেও প্রকল্পের অধিকাংশ টাকা চলে যায় এমপির পকেটে। কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি ৫ আগস্টের পর মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছেন। আবার অন্য একটি সূত্র মতে, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি রাজধানী ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন।

নুরুল হুদা মুকুট

সুনামগঞ্জের রাজনীতির মুকুটহীন সম্রাট। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

তার কথায় সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগ রাজনীতির গতিপ্রকৃতি ঠিক হয়। সুনামগঞ্জ চেম্বারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব ঠিক করেন তিনিই। ৫ আগস্টের পর তিনি ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নোমান বখত পলিন

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন ভারত হয়ে আমেরিকা পালিয়ে গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর রায় ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি ফজলে রাব্বি স্মরণ আওয়ামী লীগ আমলে আলোচিত এক নেতা। বদলী বাণিজ্য আর তদবির বাণিজ্য করে তিনি শতো কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ৫ আগষ্টের পর তিনি ঢাকায় আত্মগোপন করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল হুদা মুকুটের ভাই খায়রুল হুদা চপল সুনামগঞ্জের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। ফ্যাসিবাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে তার ভূমিকা ছিল ভয়াবহ। তিনিও বড় ভাই মুকুটের সাথে ঢাকায় আত্মগোপনে আছেন।
এদিকে জেলা ছাত্র লীগ সভাপতি দীপংকর রায় ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সুনামগঞ্জ সিলেটের সংরক্ষিত আসনের আলোচিত মহিলা এমপি শামীমা শাহরিয়ারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সুনামগঞ্জ কিংবা সিলেটে নেই। একটা সূত্র জানিয়েছে, তিনি ঢাকায় তার স্বামী পুলিশের সাবেক সার্জেন্ট শাহরিয়ার বিপ্লবের সাথে আত্মগোপন করেছেন।

সুনামগঞ্জের পৌর মেয়র নাদের বখত ৫ আগস্টের পর সুনামগ ঞ্জ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কি দেশে না বিদেশে পালিয়েছেন তা নিশ্চিত জানা যায়নি।

Sheikhsbay

Related Articles

Back to top button
Close
Close