সম্পাদকীয়

কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশী জনগণ মজলুমের পক্ষে

আনন্দের বিষয়, কাশ্মীর ইস্যুতে বিশ্ববিবেক ধীরে ধীরে জাগ্রত হচ্ছে। জরুরি বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশই ভারত ও পাকিস্তানকে ‘পরস্পরের সাথে আলোচনা করে’ এই সঙ্কটের সুরাহা করতে বলেছে। ভারত এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী কূটনৈতিক যুদ্ধ চালিয়েও নিরাপত্তা পরিষদকে এ সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সর্বশেষ পদক্ষেপের পরে ভারত বলে আসছিল যে, এটি ভারতের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে অন্য কারো সাথে আলোচনার কোনো অবকাশ নেই। এর সাথে রাশিয়া প্রথম দিকে একমত পোষণ করলেও শেষ পর্যন্ত মস্কোও পাকিস্তানের সাথে আলোচনা করে এই সঙ্কট নিরসন করতে বলেছে নয়াদিল্লিকে।

মোদি সরকারের উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে বিশ্বসম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো ভুলবোঝাবুঝি নেই। ইউরোপীয় জনগণ এবং আটলান্টিকের ওপারের মানুষের কাছেও ব্যাপারটা স্পষ্ট। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জরুরি অধিবেশনে কাশ্মিরে ভারতের একতরফা পদক্ষেপে নিন্দা ও উদ্বেগ জানানো হয়েছে। যদিও সাউদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে ভারতের অত্যন্ত ঘনিষ্ট কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এ সকল দেশের বাজার ভারতীয় পণ্য একচেটিয়াভাবে দখল করে আছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইরান ও আরব আমিরাত থেকে দিল্লি কিছুটা সমর্থন আশা করেছিল। আমিরাতের রাষ্ট্রদূত প্রথম দিকে এটি ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে উল্লেখ করেছিলেন, কিন্তু পরে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওআইসির অবস্থানকে গ্রহণ করে নেয়।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর ভাষায় কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের সমালোচনা করে বলেছেন এর মূল দায় বৃটেনের। ইরানের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতারা এ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, কাশ্মীরের মুসলমানদের অবস্থা উদ্বেগজনক। ভারত সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো কাশ্মীরের সভ্য ও ভদ্র জনগণের বিষয়ে তারা ন্যায়ভিত্তিক নীতি গ্রহণ করবে এবং সেখানকার মুসলমানদের ওপর কোনো ধরণের বলপ্রয়োগ করবে না। তিনি বলেন, ভারত উপমহাদেশ থেকে চলে যাওয়ার সময় বৃটেনের অন্যায় ভূমিকার কারণেই আজ কাশ্মীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

ভারতের উগ্রবাদী শক্তি এখন যে লড়াই শুরু করেছে তাতে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই নিরাপদ থাকতে পারবে বলে মনে হয় না। এ জন্য যার যার অবস্থান থেকে আগ্রাসন তথা প্রতিবেশীদের গ্রাস করে অখণ্ড ভারত তৈরির যেকোনো প্রচেষ্টা রুখে দিতে হবে। এর জন্যে প্রয়োজন শক্তিশালী কূটনৈতিক বলয় তৈরি করা। ভারতের বিবেকবান এবং মানবতাবাদী জনগোষ্ঠী ইতোমধ্যে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ভারত এবং পাকিস্তান দুটো দেশই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। তাই সাময়িক বিরোধ বা আবেগের কারণে আমাদেরে এমন কিছু করা ঠিক হবে না যার ফলে পারমাণবিক যুদ্ধের সূচনা হতে পারে। কাশ্মীরী জনগণের এটা জন্মগত অধিকার যে তারা নিজেদের ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। ভারত বা পাকিস্তান কোনো দেশেরই সে অধিকারে হস্তক্ষেপ বা তা সীমিত করার অধিকার নেই।

সরকারের নতজানু নীতিকে পরোয়া না করে বাংলাদেশের মানুষ কাশ্মীরের ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন । ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকে আমরা খাটো করে দেখতে চাই না। কিন্তু এ অজুহাতে আমরা আমাদের বিবেককে বন্ধক দিতে পারি না। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে সরকারের সাথে জনগণের সম্পর্ক শূন্যের কোটায় চলে যাবে। সরকারের ভূমিকা যা-ই হোক, বাংলাদেশের জনগণ দ্বিধাহীন চিত্তে কাশ্মীরী জনগণের পক্ষে রয়েছেন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

এছাড়াও চেক করুন
Close
Back to top button
Close
Close