প্রসঙ্গ: কাশেম সোলাইমানির হত্যা ও মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া

জেনারেল কাশেম সোলাইমানির হত্যার মধ্যেদিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নতুন মাত্রায় উত্তপ্ত হতে পারে। এর জন্য দায়ী ট্রাম্প প্রশাসন। কোন স্বাধীন দেশের সামরিক প্রধানকে এইভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হল মার্কিন প্রশাসন মূলত জঙ্গি কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে।ইসলাম কখনো অন্যায় ভাবে মানব হত্যাকে সমর্থন করে না। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘যে ব্যাক্তি অন্যায়ভাবে কোন প্রাণীকে হত্যা করল,সে যেন সমগ্র বিশ্ববাসীকে হত্যা করল’-(সুরা মায়েদা:৩২)।
বিশ্লেষকরা মনে করে, এই হত্যার মধ্যেদিয়ে হয়ত তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। তবে এর আশংকা কম। কেননা, ইরান কখনো আমেরিকার সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হবে না।কারণ সরাসরি যুদ্ধ ইরানের জন্য তেমন ভাল ফল ভয়ে আনবে না। অন্যদিকে, ইরান থেকে সামরিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র অনেক এগিয়ে। তাছাড়া, আমেরিকার তিন মিত্র সৌদিআরব,আরব আমিরাত ও ইসরাইল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরাসরি যুদ্ধে আমেরিকার হয়ে ইরানে হামলা চালাতে পারে। ইরান মিলিশিয়ার মাধ্যমে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে সমুচিত জবাব দিতে পারে।এতে ইরানের বেশি লাভ হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। যদিও বা কাজটা সহজ হবে না। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় সব দেশে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য মতে, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সেনা সদস্যের আনুমানিক সংখ্যা- সিরিয়ায় ৮০০, জর্ডানে ৩০০০, সৌদিআরবে ৩০০০, ইরাকে ৬০০০, কুয়েতে ১৩০০০, বাহরাইনে ৭০০০, আফগানিস্তানে ১৪০০০, কাতারে ১৩০০০, ওমানে ৬০৬, আরব আমিরাতে ৫০০০।
অন্যদিকে, ইরানের মিলিশিয়ার বিস্তৃতিও অনেক এগিয়ে। আফগানিস্তান থেকে আফ্রিকার সুদান, লিবিয়া, সিরিয়া, মিসর পর্যন্ত ইরানের প্রভাব রয়েছে। লিবিয়ায় হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহী, ইরাকে শিয়া মিলিশিয়া পপুলার মবিলাইজেশন, ফিলিস্তিনে ইসলামিক জিহাদ, হামাসহ অসংখ্যা শিয়া মিলিশিয়া থাকার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের পরিহিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে যদি মার্কিন সেনারা পা?া হামলায় চালাই ইরানের মাটিতে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রতিশোধের অংশ হিসেবে ইরানে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড ইরাকে অবহিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার ফলে ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে এবং ২০০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় এক টেলিভিশন-(পার্সটুডে-৮.১.২০.)। এছাড়াও ইরান পেন্টাগন ও সহযোগী বাহিনীকে জঙ্গি ঘোষণা করেছে।
কাশেম সোলাইমানির হত্যার জন্য সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় বইছে। তবে তাঁর মৃত্যুর পর কিছু মুসলিম ভাই এই হত্যাকে জায়েজ করার পায়তারা করছে। আসলে তাদের বুঝা দরকার যে, মুরসি, ইয়াসিন আরাফাত, সাদ্দাম হোসেন মত ব্যাক্তিরা তো সুন্নি ছিলেন কেন তাদের হত্যা করা হয়েছিল? কাজেই এখানে কোন শিয়া-সুন্নি বলে কোন কারণ নেই। সে সাথে তাদের সুরা মায়েদার ৩২ নং আয়াত স্মরণ রাখা দরকার। এ নিয়ে মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘গোটা দুনিয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়ছে মুসলিম দেশগুলো। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ সহিংসতা, নিপীড়নের বেশিরভাগ শিকার মুসলিম জনগোষ্ঠী। কিন্তু জাতিসংঘ বা বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো এর সুরাহায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এ অবহায় নিজেদের রক্ষার এখনই মুসলিম দেশগুলোকে একতাবদ্ধ হওয়া জরুরি বলে জানিয়েছেন মাহাথির মুহাম্মদ। ইরানের জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ইরানের কুর্দস ফোর্সের জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডকে বিনা জবাবে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। (দৈনিক পূর্বকোণ-৮.১.২০)। বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘আজ যারা পারস্যকে ‘শিয়া রাষ্ট্র’ বলে সমলোচনা করেন এবং শিয়া-সুন্নি বিরোধ নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, তারা ইসলামের রাজনৈতিক ইতিহাস না জেনে নিছক আবেগের ওপর ভর করেই মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ-বিসংবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছেন, বলা চলে। ধর্ম ও রাজনীতি এবং যুদ্ধনীতি সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান না থাকলে শিয়া-সুন্নি সম্পর্কে মন্তব্য করা অন্ধের হাতি দেখার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে’। (নয়া দিগন্ত:১০.১.২০.)
ন্যাটো যেভাবে কাশেম সোলাইমানির হত্যা নিয়ে আমেরিকার পাশে দাঁড়িছিল একইভাবে মুসলিম বিশ্ব আশা করছিল ইরানের পাশে ওআইসিকে সেভাবে পাবে। কিন্তু পরে যা হল তারই বিপরীত।
একইভাবে কাতার, ওমান, ইরাক এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সৌদিআরব ও আরব আমিরাত বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বিবৃতি দিলেন যা মুসলিম বিশ্বের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমন দুঃখজনক। কারণ, পবিত্র কুরআনে এসেছে,’আর তোমরা সকালে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃড় ভাবে ধারণ কর,পরপর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’।