মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আবদুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
গতকাল বুধবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার এ আবেদন করেন মাজেদ। আর রাতেই প্রাণভিক্ষার ওই আবেদন নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি।
বঙ্গভবনের একটি সূত্রে জানা যায়, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আব্দুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় হয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছায়। এরপরই তা খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষের সামনে দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকছে না।
এর আগে মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে পেয়ে পড়ে শোনানোর পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আব্দুল মাজেদ।
এদিকে, মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর প্রথম ধাপ হিসেবে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এম হেলাল চৌধুরী এই পরোয়ানা জারি করেন। করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে আদালতে টানা বন্ধ চলছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শুধু গতকালের জন্য ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত খোলা রাখা হয়।
জানা গেছে, ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে আরেকটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ‘শুধুমাত্র ৮ এপ্রিলের জন্য ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হলো।’ সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামি মাজেদকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এই আবেদন করেন। পরে আসামি মাজেদকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুপুরের আগেই আদালতে হাজির করা হয়। জানা গেছে, ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হতে পারে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
এক কারা কর্মকর্তা জানান, কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ করা হয়েছে। মাজেদের ফাঁসি ওই মঞ্চে কার্যকর করা হলে সে ক্ষেত্রে এটাই হবে নতুন করে স্থাপিত এই কারাগারে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা।
গত মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল মাজেদ। দীর্ঘদিন তিনি ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে খুন হন। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়। তাঁরা হলেন কারাগারে থাকা আসামি মেজর বজলুল হুদা, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন, লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও ল্যান্সার মহিউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি পলাতক থাকেন। তাঁরা হলেন খন্দকার আবদুর রশিদ, রিসালদার মোসলেমউদ্দিন, শরিফুল হক ডালিম, এ এম রাশেদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী, আবদুল আজিজ পাশা ও ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ। আজিজ পাশা ২০০২ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সবাইকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে হত্যা করা হয়। কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেন। এর মধ্যে ক্যাপ্টেন মাজেদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারীদের অন্যতম একজন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মাজেদকে সেনেগালে বাংলাদেশ দূতাবাসে তৃতীয় সচিব পদে চাকরি দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সরকার।