করোনার আক্রমণে কোনঠাসা পুরো পৃথিবী। পালটা আক্রমণ চালাতে উঠেপড়ে লেগেছেন বিশ্বের সব বাঘা বাঘা চিকিৎসাবিজ্ঞানী। কিন্তু কোনো কুল-কিনারা করতে পারছেন না তারা। করোনার থাবায় বেহাল দশা সারা বিশ্বের। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা।
করোনা মোকাবিলায় সরকার দেশের মানুষকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়েছে। দেশের কয়েকটি জেলা ইতোমধ্যে পুরো লকডাউনও হয়ে গেছে। একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারছেন না মানুষ। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পেও। বিশেষ করে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সিলেটের স্পটগুলো নিরবে কাঁদছে পর্যটকশূন্যতায়। স্থবির হয়ে আছে সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ পাহাড়-টিলা, চা-বাগান, দেশের একমাত্র সোয়াম ফরেস্ট, হাওর, বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটের রয়েছে প্রসিদ্ধ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। সিলেটে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা-বাগান, পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের সম্ভার এই সিলেট দেশের অন্যতম পর্যটন নগর। সিলেটকে এজন্যই বলা হয় প্রকৃতিকন্যা।
সারা বছরই দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক ঘুরতে আসেন সিলেটের শতাধিক পর্যটনস্পট। প্রতিদিনই সিলেটের জাফলং, লালাখাল, পাংথুমাই, লোভাছড়া, উৎমাছড়া, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, ভোলগঞ্জের সাদাপাথর এলাকায় শত শত পর্যটক ঘুরতে যান।
কিন্তু বিশ্বকে ধাক্কা দেয়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাব ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যাতে লোক সমাগম না হয় সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে প্রত্যেক উপজেলার ইউএনওদের কড়া নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তাই সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা।
এদিকে, সিলেট বিভাগের ৪ জেলার প্রায় শতাধিক পর্যটন স্পটে পর্যটক না আসার কারণে প্রতিদিন দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ অঞ্চলের পর্যটন খাত নিয়ে কাজ করা সিলেট ট্যুরিজম ক্লাবের তথ্যমতে- প্রতিমাসে সিলেটে প্রায় ২ শতাধিক বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত দুই মাসে কোনো বিদেশি পর্যটক আসেননি।
সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন সিলেটভিউ২৪-কে বলেন, করোনার কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সিলেট। বিদেশিরা যেমন আসছেন না, দেশি পর্যটক সমাগমেও রয়েছে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা। এ কারণে সকল স্পট এখন পর্যটকশূন্য। এমন অবস্থায় প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার লোকসান দিচ্ছে এ খাত। কারণ- ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ মাসগুলোতে সিলেটে বিদেশি পর্যটকদের আগমন থাকে বেশি। কিন্তু করোনার কারণে তা পুরোপুরি বন্ধ।
তবে করোনাকে জয় করে আবারও প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠবে প্রকৃতিকন্যা সিলেটের সকল পর্যটনস্পট । আবারও দর্শনার্থীদের বাদাম খোসা আর পটেটো চিপসের খালি প্যাকেটে বিলীন হবে কচি ঘাসগুলো। চলবে আড্ডা আর চটপটি-ঝালমুড়ি খাওয়া। পর্যটকদের হই-হুল্লোড় আর তাদের মোবাইল আর ক্যামেরার ‘ক্লিক’ শব্দগুলো মধুর তরঙ্গ তুলবে স্পটগুলোতে, এমনটাই প্রত্যাশা সিলেটবাসীর।