পোস্ট

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত‍্যাবর্তন নিয়ে নাটক

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনাগ্রহের কারণে প্রত্যবর্তন শুরু করা যায়নি: রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিয়ে বিবিসি প্রতিবেদন

মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের  আস্থার সঙ্কট দূর করা, নাগরিকত্ব দিবে কি না আমরা জানি না: বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

লণ্ডন ২২ আগস্ট – বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে শরণার্থী প্রত্যাবাসনের আরো একটি উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার মুখে। প্রত্যাবাসনের জন্য তিনটি বাস ও দুটি ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো। ব্যাপক প্রস্তুতি ও উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত এ দফায়ও শুরু করা গেলো না প্রত্যাবাসন কর্মসূচী।

এর আগে গত বছর নভেম্বর মাসে একই রকমের একটি প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণেই ভেস্তে যায়। এ দফায় গত কয়েক দিন ধরেই আজকের তারিখটিকে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো।

আজ ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টেকনাফের নোয়াপাড়ার ২৬ নং ক্যাম্পের কাছে প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো তিনটি বাস ও দুটি ট্রাক। উদ্দেশ্য প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের এসব পরিবহণে করে কুড়ি কিলোমিটার দূরবর্তী বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে পৌঁছে দেয়া। তবে দুপুর সাড়ে বারটা পর্যন্ত কোন রোহিঙ্গা সেখানে আসেনি।

পরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম, ঢাকাস্থ চীন দূতাবাসের দুজন প্রতিনিধি এবং মিয়ানমার দূতাবাসের এক জন প্রতিনিধি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।

মি. কালাম সেখানে বলেন, “আজ প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য রোহিঙ্গাদের সীমান্তে পৌঁছে দেয়ার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি রাখা হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে কোন রোহিঙ্গা আসেনি”।

এ দিকে আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের  আস্থার সঙ্কট  দূর করা।

তিনি আরো বলেন, আমরা চেয়েছিলাম আজ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি শুরু করতে। এটি চুক্তি অনুযায়ী দুই বছর চলার কথা। কিন্ত দুর্ভাগ্যজনক তা আজ আমরা শুরু করতে পারলাম না। আমরা প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু একজন রোহিঙ্গাও যেতে রাজি হয়নি। আমরা অপেক্ষায় থাকবো। চেষ্টা চালিয়ে যাব। যখন কেউ রাজি হবে আমরা তাদের ফেরত পাঠাবো।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে যে আস্থার সঙ্কট আছে সেটা দূর করা। সমস্যাটি তাদের সৃষ্টি, সমাধানও তাদেরই করতে হবে। আমার সাজেশন থাকবে তারা বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের (মাঝি) মিয়ানমারে নিয়ে যাক। মিয়ানমার রাখাইনে কি উন্নয়ন করেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য কি বব্যস্থা করেছে, তাদের নিরাপত্তার জন্য কি আয়োজন রয়েছে, সেটা তাদের দেখাক। বাংলাদেশ থেকে সাংবাদিকদেরও নিয়ে যেতে পারে। এতে আস্থার সঙ্কট দূর হবে এবং রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে উৎসাহিত হবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা চিন্তা করছি বিভিন্ন দেশের লোককে নিয়ে একটা কমিশন গঠন করব। তাদেরকে মিয়ানমার রাখাইনে নিয়ে যেতে পারে এবং প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ কতটা সৃষ্টি হয়েছে সেটা দেখাতে পারে।

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার প্রশ্নে দেশটির বিদ্যমান যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার বলেছে, তারা ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রক্রিয়া ও পর্যায়ক্রমে নাগরিকত্ব দেবে। সে বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না।’

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গারা কেনো ফিরে যেতে চায় না এ নিয়ে বাংলাদেশ বা বিবিসি’র সাংবাদিকরা কোনো কথা বলেননি। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে দুটো বিষয় স্পষ্ট, আস্থার সংকট এবং অমীমাংসিত নাগরিকত্ব। রোহিঙ্গা যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছে তা কারো অজানা নয়। ফিরে যাওয়ার জন্যে জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা এবং সে দেশের নাগরিকের মর্যাদা পাওয়ার নিশ্চয়তা জরুরী।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

এছাড়াও চেক করুন
Close
Back to top button
Close
Close